
তিস্তার ডাক — ২
চরের চিঠি
তিস্তা,
আজ তোমায় লিখতে বসেছি
পানির নিচে চাপা পড়া আমাদের ঘরের নামে।
তুমি তো জানো—
আমার বাবার সোনালী ধান কীভাবে
তোমার হঠাৎ ক্ষুধায় তলিয়ে গিয়েছিল এক বর্ষায়।
তুমি কি মনে রাখো সেই গাছটা—
যেটা আমার মা ছোটবেলায় লাগিয়েছিলেন চরের কিনারায়?
তুমি যেদিন হঠাৎ স্রোতে বদলে গেলে রূপ,
সে গাছটাও উঠে এসেছিল আমাদের কাঁধে
ভেঙে পড়েছিল ঠিক মায়ের বুকের মতো।
তিস্তা,
তুমি কি কেবলই নদী?
না তুমি এক অভিশাপ—
যার ভালোবাসায় আগুন আছে
যার বুকে জ্বলে কাদা,
যার গান শুধু কষ্টের কোরাস?
আমরা তো কাউকে কিছু বলি না
শুধু বাড়ি বদলাই বারবার
শুধু বৃষ্টি হলেই কাঁপে শিশুরা
শুধু মাটির ঘ্রাণে থাকে
তোমার প্রতিশ্রুতির পোড়া ছায়া।
তিস্তা,
তোমার জল চাই না আর
চাই একটু স্থিরতা—
একটা রাত, যেখানে ঘর যাবে না ভেসে,
একটা সকাল, যেখানে জমি থাকবে পরের বছরের বীজের অপেক্ষায়...
_____________________________________________
গাঙচিলের ডানায় জীবন
জীবন পথে গাঙচিল উড়ে,
নীল বিস্তারে হারায় দূরত্বের রেখা।
তবু—
ফেরার যত তারা জ্বলে,
ততটাই যেন আসে কাছে...
স্মৃতির ঢেউয়ে ভাসে আকুলতা,
এক বুক নীরবতা নিয়ে উড়ে যায় পাখা।
অচেনা সেই দিগন্ত ডাকে,
তবুও চেনা আলোয় ফিরে আসে আশা।
পথ না ফুরোলেও ফুরোয় না মন,
উড়ান জানে কোথায় বসে থাকে ধন।
গাঙচিল জানে—
যত দূরেই যাওয়া হোক,
ফেরার তারাগুলো খুব কাছের।
______________________________
ছায়া হয়ে থাকা শিক্ষা
নিশীথ নিস্তব্ধতায় ছায়া হয়ে পড়ে আছে জ্ঞান,
ভাঙা পাঁজরের নিচে কাঁপে ছিন্ন পাতার প্রাণ।
দেয়ালের গায়ে চুনকাম নয়, জমে আছে ইতিহাস,
মলিন অক্ষরে লেখা, কে যেন ছিল—সে এক শুদ্ধ বিশ্বাস।
ফুটপাথে শুয়ে থাকা অক্ষরগুলো চেয়ে থাকে আকাশে,
তাদের চোখে নেই ঘুম, শুধু প্রশ্ন জাগে বাতাসে।
দূরের বাতিতে ঝিমিয়ে পড়ে একটুকরো স্বপ্নের ছায়া,
নিস্পন্দ সেই স্বপ্নে ঢেউ তোলে শিক্ষার নিঃশব্দ মায়া।
কালো ধুলোর নিচে মুখ লুকিয়ে ঘুমায় প্রতিশ্রুতি,
টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে, যেন পুরনো এক পাঠ্যসূচি।
কেউ পড়ে না, কেউ জানে না নাম—
তবু পাতা ওল্টায় সময়, দেয় অদৃশ্য এক দাম।
ভোরের কোল ঘেঁষে আসে না আর আলো,
আলো আসে বিলম্বিত, জড়ানো কুয়াশার চাদরে ঢলো।
আধারে
ই গড়ে ওঠে জাগরণের পাঠশালা,
যেখানে অক্ষর নয়, নিঃশ্বাসই হয়ে ওঠে শিক্ষার জ্বালা।
সংশ্লিষ্ট পোস্ট

কয়েকটি কবিতা
সকল দ্বিধা। ফেলে দিয়ে আস্তে আস্তে চলে আসি অন্ধকারে।এভাবেও ফেরা যায়।ফেরা কি সম্ভব?সাধুসঙ্গ টেনে আনে গার্হস্থের তুমুল আলোয়।দড়ি দড়া ছিড়ে ভেঙে পাখিও কি ফিরতে পারে পরিচিত শাখের জঠরে?

দুটি কবিতা
একা যে হাঁটছ যুবক এ বন পছন্দ বুঝি, ক'দিন এসেছ আগে শুনি বসো হেলান দিয়ে এই ফাল্গুনের ধ্বনি আর আগুনের পাশে বসে শুনি তোমার কথা সব

একটি স্নেহ চূড়া মৃত্যু .......
ছেড়ে দেওয়ার পরেও কেমন যেন সে নয়ন আপন নয়ন হয়ে থাকে। কাছে থাকলে যদি অখিল স্রোতের বিড়ম্বনা আসে, একসময়ের পরিচিত একান্ত সংকেতগুলো হঠাৎ ঝড়ের মতন আবছা হয়ে আসে, ছেড়ে দেওয়ার পরেও সে কেমন একটা শিউলি শিউলি গন্ধ এই অবেলাতেও সারা গায়ে লেপ্টে রাখে,