২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
সাকিল মাসুদের তিনটি কবিতা
সাকিল মাসুদের তিনটি কবিতা

সময়ের বিভ্রম

 

আমি যতক্ষণ

ততটুকুই সময়ের দৈর্ঘ্য।

সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা—

সবই কেবল বিভ্রম।

হৃদস্পন্দন সেকেন্ডের কাঁটা,

নিঃশ্বাসে ফুরায় মিনিট।

ঘণ্টা গলে বয়ে যায় মগজের স্রোতে,

দিন-রাত্রির শিরায় শিরায়।

আমি আছি বলেই টিকে আছে সময়।

শূন্যতার ভেতর উড়ে যায় কর্পুরের ঘ্রাণ,

ক্ষণিকের আলোর মরিচিকায় অনন্ত যাত্রা—

অন্ধকারের ভেতর অবিনশ্বর পৃথিবী

অসমাপ্ত জন্মের ইতিহাস।

 

_____________

 

যখন পুড়ে গেল সব...

 

পুড়ে গেল

বাতাসে পতপত করে উড়তে থাকা

তোমার ওড়নাটা

খুব গভীর রাত্রিতে জ্বালানো আগুনে,

যাদের কেবল ফুটেছিল একটি অন্ধ চোখ

তারাই পথ দেখাবেন বলে জ্বেলেছিল

দেয়াশলাইয়ের কাঁঠি...

আমি কেবল দেখছিলাম

আর আগুনে জ্বালানো আলোর ভাষা পড়ছিলাম।

প্রথমে কামিজটা পুড়তে পুড়তে

ছাই হয়ে গেল

শরীরের আচ্ছাদন গলে নগ্ন বক্ষের স্তন

লজ্জায় নত হয়ে চেয়ে থাকলো মাটির দিকে,

তারপর সালোয়ার পুড়ে ছাই হয়ে গেল

মাটিতে পড়ে থাকলো আমারই জন্মস্থানের

অরক্ষিত দুয়ার

যার দিকে তাকিয়েছিল কতগুলো শকুনচোখ...।

আমি কেবল দেখছিলাম

আর নিজের ছায়াকে খুঁজছিলাম আগুনের ভেতর।

একদল যুবক স্লোগান দিতে দিতে ছুটে এসে

আঘাত করলো পা'য়ে

এরপর হাতে

একজন ঈশ্বরের নাম করে

একটা বড় তরবারি দিয়ে বেধড়ক কোপালো অবিরাম

ঠিক ধরের ওপরে-বুকে-পিঠে গিড়ায় গিড়ায়,

মুহুর্তের মধ্যেই কোরবানির পশুর মতো

তরতর করে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে

পুড়ে ছাই হয়ে গেল হাত-পা

তারপর নাভী পুড়ছে

রক্ত পেট্রোলের মতো দাউ দাউ করে জ্বলছে

তারপর বুক-শরীর-মাথা...সব।

আমি কেবল দেখছিলাম

আগুনের ফুলকির ভেতর খুঁজছিলাম

মৃত মানুষের আর্তনাদ...।

ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরা মানুষের দলে

নিস্তব্ধতা ভেঙে

ওরা আমাকে কিছু বলছিল না বলে

আমি কেবল দেখছিলাম...।

দেখতে দেখতে দেখি—

আসলে আমিই রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত

বাতাসের পোড়া লাশের গন্ধ

দিগন্তে ভেসে যাওয়া পরিত্যক্ত ছাই...

একটা মৃত মানুষের আত্মা

কবর থেকে তুলে আনা বেওয়ারিশ লাশ...

যাকে পিটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ওরা।

 

____________

 

প্রিয় রুসেলিয়াকে 

 

প্রিয় রুসেলিয়া,

রক্ত, মাংসের গন্ধ পুড়ে যাওয়া আগুনের ধোঁয়ায় ভারী হয়ে ওঠেছে বাতাস। ঘামের লবণে আমার শরীরের মানচিত্র ঝরে পড়ছে প্রতিরাতেই, যেন নিষিদ্ধ কোনো প্রাচীন পাণ্ডুলিপি।

আর সেই ঘাম, জন্মেছে তোমার নাভীমূলে—যেখানে প্রতিদিন পুষে রাখো মৃত মৌসুমের ফুল।

সেখানে আমি আর শুভেচ্ছা পাঠাতে চাই না,

নাভীমূলের কাছে গিয়ে আজকাল হাত পুড়ে যায়, ছাই হয়ে যায় আঙুল।

নাজিম হিকমতের কথাকে তুমি সত্য প্রমাণ করেছো বটে—

কিন্তু তুমি শুধু আমার কাছে এসে পরাজিত হওনি,

আমার ভেতরের মানচিত্র থেকেও ঝরে পড়েছো,

যেমন ধসে পড়ে যুদ্ধকালীন গ্রন্থাগার,

সব বইয়ের বাক্য হয়ে ওঠে আগুনের গন্ধ। পোড়ার ভাষা।

রুসেলিয়া,

তোমার গায়ে এখন জ্বলন্ত পতাকার মত পোড়া দাগ।

বয়ে চলেছো একটা ভুল জন্মের ভ্রূণ,

যার হাত-পা গজানোর আগেই রাষ্ট্রজীবিরা তাকে হত্যা করেছে।

তবুও তুমি প্রতিদিন একটা বেওয়ারিশ, আধভাঙা চাঁদ হয়ে

ঝুলে থাকো আমার কাঁধের ওপর।

চুপি চুপি অসীম আকাশের মায়া ফেলে,

নিচে চেয়ে— পাঁজরে জমে থাকা আত্মবিশ্বাসের ধ্বংসের খোঁজ নিও না আর।

আমার শহরে আজকাল শিশুদের কান্না নেই,

তারা মূলত জন্ম নিচ্ছে লাশ হয়ে।

তারা জেনে গেছে অমানুষ হবার গল্পকথা।

এখানে শকুনেরা আর শুধু শকুন নয়,

তারা টেন্ডার জিতে নিয়েছে মানুষের চামড়া গলানোর খরতাপে।

তোমার ওপর এখন বারোয়ারি শকুনের চোখ,

যারা ভালোবাসার দামে হাড় বিক্রি করে।

ভাবতে ভাবতে হঠাৎই কিছুদিন থেকে আমার জ্বর।

তাপে পুড়ে যাচ্ছে বিছানা, বালিশ, ঘরদোর,

এমনকি দেয়ালে ঝোলানো অমর ছবিও।

ভেবেছিলাম বাকি দিনগুলোতে সুস্থ বেঁচে থাকা কঠিন হবে।

হচ্ছে তাই।

কারণ, বেঁচে থাকাটাও এখন নিষিদ্ধ ঘোষণার মতো।

আজ অন্তত তুমি একটা চিঠি লিখতে পারতে। জানাতে পারতে তোমার অন্তর্গত কোলাহলের নাম।

তোমার চোখে জমে থাকা অশ্রুর রং লাল, নাকি সবুজ?

ইতি,

সাকিল মাসুদ

(একজন ধ্বংসপ্রবণ প্রেমিক ও আগুনে পোড়া নাগরিক)

সংশ্লিষ্ট পোস্ট

কয়েকটি কবিতা
ওয়াহিদার হোসেন

কয়েকটি কবিতা

সকল দ্বিধা। ফেলে দিয়ে আস্তে আস্তে চলে আসি অন্ধকারে।এভাবেও ফেরা যায়।ফেরা কি সম্ভব?সাধুসঙ্গ টেনে আনে গার্হস্থের তুমুল আলোয়।দড়ি দড়া ছিড়ে ভেঙে পাখিও কি ফিরতে পারে পরিচিত শাখের জঠরে?

কবিতা৭ মে, ২০২৪
দুটি কবিতা
জ্যোতির্ময় বিশ্বাস

দুটি কবিতা

একা যে হাঁটছ যুবক এ বন পছন্দ বুঝি, ক'দিন এসেছ আগে শুনি বসো হেলান দিয়ে এই ফাল্গুনের ধ্বনি আর আগুনের পাশে বসে শুনি তোমার কথা সব

কবিতা৭ মে, ২০২৪
একটি স্নেহ চূড়া মৃত্যু .......
শ্রী সদ্যোজাত

একটি স্নেহ চূড়া মৃত্যু .......

ছেড়ে দেওয়ার পরেও কেমন যেন সে নয়ন আপন নয়ন হয়ে থাকে। কাছে থাকলে যদি অখিল স্রোতের বিড়ম্বনা আসে, একসময়ের পরিচিত একান্ত সংকেতগুলো হঠাৎ ঝড়ের মতন আবছা হয়ে আসে, ছেড়ে দেওয়ার পরেও সে কেমন একটা শিউলি শিউলি গন্ধ এই অবেলাতেও সারা গায়ে লেপ্টে রাখে,

কবিতা৭ মে, ২০২৪