২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
শিবুর মেয়ে
শিবুর মেয়ে

পূর্ব আকাশে রক্তিম রবি উঁকি দিচ্ছে টুকরো মেঘের আড়াল থেকে। সেই নরম প্রভায় নদীর ধারে দোদুল্যমান রূপলি কাশফুল গুলো যেন সোনালী আভায় সেজে উঠেছে। বাড়ির পাশের নদীর স্রোতধারা অচেনা কোন সুরে গান গাইছে, যেন দেবিপক্ষের সকালে আগমনীর স্বাগত বার্তা। সেই গানের সুরের সাথেই ভেসে আসছে শ্রী বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের মনোমোহিনী দেবী বন্দনা।

 

"আর মাত্র ছ'দিন তারপরেই মায়ের বিদায়, মা তো বটেই, তবে মেয়ে ভাবতে ক্ষতি কী" - বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললো শিবু। এবছর ৯ খানা প্রতিমার বায়না পেয়েছে সে। শুধু চক্ষুদান আর সাজসজ্জা বাকি, তাহলেই প্রতিমার প্রাণের স্পন্দন জেগে উঠবে, যেন জগৎ জননী মা নিজেই অবতীর্ণ হবেন।

কিন্তু বিদায়ের কথা এলেই বুক কেঁপে ওঠে শিবুর । প্রতিবারই এ বেদনা নতুন। মেয়ের মত করে গড়া প্রতিমা, বিদায়ের সময় যেন মা হয়ে ওঠেন। শিবু ছাড়া আর কে বোঝে সেই ব্যথা! তার হৃদয় যেন ১০ খন্ডে বিভক্ত হয়েছে এবার।

 

নিজেকে সামলে অশেষ স্নেহে তুলির টান। চক্ষুদান শেষ হতেই চারিদিক যেন ঝাপসা হয়ে এল। শিবুর চোখে আজ নদীর জলধারা বাসা বেঁধেছে। প্রতিমার মায়াময়ী স্নিগ্ধ মুখখানি দেখে সে আর স্থির থাকতে পারল না। আবার কোন মতে নিজেকে সামলে, মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে কেঁদে বলল- "কিরে মা, আমায় ছেড়ে যে চলে যাবি, মনে পড়বে না আমাকে?"

মা আস্তে আস্তে শিবুর মাথায় হাত রেখে বলল- "তুই তো আমার হৃদয়ে আছিস সর্বক্ষণ, মেয়ে কি তার বাবাকে ভুলতে পারে?"

মায়ের উত্তর শুনে শিবুর হৃদয়ে আনন্দের প্লাবন জেগেছে। "তাহলে, ডাকনারে মা আমায় বাবা বলে একটিবার"- বলে উঠলো শিবু।

দূরে আকাশ থেকে যেন ভেসে আসছে সেই অতি প্রত্যাশিত ডাক "বাবা"।

 

"বাবা, বাবা, ও বাবা, কিগো উঠবেনা? আজ যে মহালয়া। দেখো কটা বাজে? মায়ের আগমনী শুনবে না?"- বলে উঠলো শিবুর একমাত্র মেয়ে উমা। ঘুম থেকে উঠে মেয়েকে কোলে নিয়ে শিবু বলল- "অবশ্যই শুনবো মা"। ওদিকে রেডিওতে বেজে উঠলো - 

"আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক-মঞ্জীর। 

ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; 

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত ......"

সংশ্লিষ্ট পোস্ট

সোয়েটার
অবিন সেন

সোয়েটার

গন গনে নীল শিখা মেলে গ্যাসের উনুন জ্বলছে। কেটলিতে জল সেই কখন থেকে ফুটে চলেছে। বাষ্প হয়ে অর্ধেক জল মরে গেছে। সেই দিকে কোনও খেয়াল নেই নীলার। সে একটা বেতের গদি মোড়া আরাম চেয়ারে বসে আছে। কিচেনটা ঢের বড়। প্রায় প্রমাণ সাইজ একটা ঘরের মতো। এখানে বসে উলের কাঁটায় শব্দ তুলে সোয়েটার বুনে যাওয়া তার একমাত্র বিলাসিতা। শীতের দিনে আগুনের এই উত্তাপটা কী যে আরামের, নীলা তা কাউকে বোঝাতে পারবে না। গ্যাসটা কতক্ষণ জ্বলছে সে দিকে তার কোনও খেয়াল নেই। চায়ের জল বসানোটা আসলে একটা ছুতো। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতাকে সে প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিচ্ছে। গ্যাস পুড়ছে পুড়ুক। সেই নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। তার স্বামী বিপুলের টাকার অভাব নেই। তারা বিশাল ধনী না হতে পারে কিন্তু এই সব সামান্য বে-হিসেবী খরচ করার মতো তাদের ঢের পয়সা আছে।

গল্প৭ মে, ২০২৪
এখানে আসবে না কেউ
রঙ্গন রায়

এখানে আসবে না কেউ

চেক - হ্যালো টেস্টিং - শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন – জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গেল। ক্যালেন্ডারটা উড়ছে। দেওয়ালে ঘষটানির একটা শব্দ। পুরোনো বছর উড়ছে। আমি ৩১শে ডিসেম্বরে এসেই থমকে গেছি। বাইরে নতুন বছর চলছে, আমি পুরোনো বছরে। কীরকম অদ্ভুত লাগে। কাকতালীয় ভাবে দেওয়াল ঘড়িটাও বন্ধ। ব্যাটারি শেষ।

গল্প৭ মে, ২০২৪
অবনী বাড়ি আছো
পার্থসারথী লাহিড়ী

অবনী বাড়ি আছো

“আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছ?”

গল্প৭ মে, ২০২৪