
১.
বাইরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি, ঘরে বসেই ভিজে যাচ্ছে শিপু।বাইরে ঝমঝমিয়ে জোছনা। শিপু জোছনা পেতে স্বপ্ন দেখে দোতালার বারান্দায় দুলছে দোলনা।
হাজারদুয়ারী নয় হাজার হাজার জানালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিপুদের বাড়ি।ফাঁকফোকর দিয়ে গাছ এসে খোঁজ নেয় জ্বর কেমন? জীবন একটি ক্রিকেট বল।লোফালুফি করতে করতে এগিয়ে যায় শিপু।পয়সা নেই তাই শখও নেই।
২.
শিপুদের বাড়ির বেড়াল আমার সংগে খেলে।লেজ নাড়াতে নাড়াতে ল্যাদ খায়। দখল করে থাকে নরম বিছানা। শিপুর শাশুড়ী বিরক্ত হয় কিন্তু কিছু বলতে পারেনা হাজার হোক মা ষষ্ঠীর বাহন।খেতে বসলেই থালার আশে-পাশে কাকুতি মিনতি স্বরে ডাকে।খেতে দিলেও উনি সব কিছু খাবেন না।নরম মাছের হাড়,মাথা হামির খুব প্রিয়। আদর পেলেই হামি লেজ নাড়ে। গোল গোল করে।শিপুও তাই।
৩
হামি বেড়ালের নাম টমি কার নাম হতে পারে? হু। ঠিকই ধরেছেন। শিপুর কুকুরের নাম টমি।মাদি কুকুর। মা হবে। অনেকগুলো বাচ্চা দেবে।শিপুর ছেলে খেলবে।ঘুতুর ঘুতুর ময়না বলে ডাকতে ডাকতে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসবে।দেখা মাত্র চিৎকার করে শিপু বলবে,
কি করেছিস তুই! কামড়ালে ১৪টা ইঞ্জেকশন। বাড়ি নোংরা করবে।উফফ! আর পারিনা।আমার হাড়- মাস জ্বালিয়ে খাবে।এই ছেলে আমার জনমের শত্তুর।
৪
শিপুর সময় কাটেনা।মাথায় ভুত চাপলো।ছাগল পুষবে।পোষানি নিলো।নাসিমাদের একটি দু - বিয়ানি কালো ধাড়ি।বছরে দু বার বাচ্চা দেবে।ছাগল পুষতে গিয়ে বারো ছড়াদ।বিস্টি এলে ঘরে চলে আসে লালি।হেগে মুতে একাকার করে দেয়।মেয়ে লিলিকে পরিস্কার করতে বললে,
লিলি বলে,তোমার লালি তুমি সাফ সুতরো করবে।
লালি বছর হতে না হতে ডাকতে থাকে। পাড়ার বৌ বিটি বলে।লালিকে পাঁঠা দেখাও।ভরন হবে।লালির সেক্স বুঝতে পারে শিপু।কিন্তু কি করবে?কাকেই বা বলবে?
লজ্জা করে। অন্ধকারের জিনিস দিনের আলোয় হবে। বিষয়টি ভাবতেই না ভাবতেই নিজের নাগরকে দেখতে পেয়ে দড়ি ছিঁড়ে দৌড় দিলো লালি।
৫
সেদিন শিপুদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতেই নারকেল গাছ জিজ্ঞেস করলো,শিপুকে দেখেছো? না না, শিপুকে কিকরে দেখবো! ওর পাত্তায় নেই।সেই যে বিহানবেলায় মেঘ চরাতে গিয়ে হারিয়ে গেল।
নারকেল গাছ বললো,তুমি কি জানো,শিপুর বেড়াল মারা গেছে। কুকুর চলে গেছে। ছাগল বিক্রি হয়ে গেছে। খুব একা হয়ে গেছিলো শিপু।ওর দিদির গরুটা চেয়ে এনেছিল। ধলুকে নিয়ে সময় কাটে শিপুর।বিকেল হলেই ধলুকে নিয়ে চলে যায় চরের মাঠে।শিপু মহেশ এর গল্প জানেনা।কিন্তু ধলু তার বন্ধু।ধলুকে সারাদিন শিপু তার মনের গল্প বলে।না-পারা কাজের কথা বলে।ভালোবাসার মানুষের কথা বলে। ধলুও মাথা নেড়ে, কান নাড়িয়ে সায় দেয়।ধলু শিপুর অন্ধকার জীবনের জোনাকি হয়ে থেকে যায়।
৬
সেদিন বাস থেকে নামছি। পাশ দিয়ে একটি মাঝবয়েসী মহিলা বাসে উঠে গেল।আধপাকা চুল।অযত্নে মাথা জুড়ে রয়ে গেছে।অবহেলা সারা শরীরে। গরু-ছাগল, কুকুর -বেড়াল হারিয়ে আধপাগলি। মেয়ের আবদারে হাঁস এলো বাড়িতে।হাঁসকে শিপুদের গাঁ-ঘরের মানুষ বতক বলে।শিপুর বতক আর মেয়ের হাঁস দানাপানি পেয়ে গাঝাড়া দিয়ে উঠলো। সাদা সাদা হাঁস প্যাঁক প্যাঁক করে ঘুরে বেড়ায় বাড়ির সামনে, পিছনের কলতলায়।বর্ষার সময় পুকুর জলে ভরে গেলে পোয়াতি হয়ে যায়
।পোয়াতি পুকুরে হাঁসগুলো হারিয়ে যায় মনের আনন্দে। আর শিপু পাগলের মতো ডাকতে থাকে,চই চই..চই চই।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যায়।পাখি বাসায় ফেরে কিন্তু শিপুর হাঁস ফেরেনা।
৭
শিপু মনে মনে কান ধরে। আর কিছু পু্ষবে৷ না।কিন্তু শিপু না চাইলে কি হবে। আল্লা যাকে দেয় ছাপ্পর ফারকে দেয়।তাই যত ঝামেলা ঝঞ্জাট ঈশ্বর শিপুর ঘরে নিয়ে এসে তোলে।
সেদিন লক্ষীবার।শিপুর ঘরে পুজো।সকাল থেকেই ব্যস্ত। হাত পা চালিয়ে কাজ করছে।এমন সময় লাহারি বেলায় কালাম মেম্বার এসে খবর দিলো,বৌদি, তোমার নামে মুরগির বাচ্চা এসেছে পঞ্চায়েতে।নিয়ে এসো।মুরগির নাম শুনেই গা ঘিন ঘিন করতে লাগলো। স্নান করে পুজোর আয়োজন করছে।এই খবর শুনে আবার স্নান করলো।
দুপুরের খাওয়া সেরে উঠে দেখে।মেয়ে পাশের বাড়ির কাকিমার সংগে গিয়ে মুরগির বাচ্চা ঘরে এনেছে।উঠোনে ভুরভুর করে ঘুরছে আর পিঁকপিঁক করছে।
কি জ্বালা।এ কে সামলাবে। যাতা কষ্ট। এ বালের সংসার আমার ভাল্লাগে না।সব ছেড়েছুড়ে বিবাগী হয়ে যাবে।
ভাবতে ভাবতেই মুরগি বড়ো হতে থাকে,মেয়েও বড়ো হতে থাকে। ভাঙা বেড়ার চারপাশে শেয়ালের ভীষণ উপদ্রব। ভয়ে রাতে ঘুম আসেনা।মনে মনে কৃষ্ণকে স্মরণ করে।শিপু নিজেকে রাধা ভাবে।যদি কেউ কৃষ্ণ হয়ে তার বেড়ার ঘরের হাজারি জাফরি জানালার পাশে এসে ডেকে ওঠে, শিপু...আমি এসে গেছি।
সংশ্লিষ্ট পোস্ট

সোয়েটার
গন গনে নীল শিখা মেলে গ্যাসের উনুন জ্বলছে। কেটলিতে জল সেই কখন থেকে ফুটে চলেছে। বাষ্প হয়ে অর্ধেক জল মরে গেছে। সেই দিকে কোনও খেয়াল নেই নীলার। সে একটা বেতের গদি মোড়া আরাম চেয়ারে বসে আছে। কিচেনটা ঢের বড়। প্রায় প্রমাণ সাইজ একটা ঘরের মতো। এখানে বসে উলের কাঁটায় শব্দ তুলে সোয়েটার বুনে যাওয়া তার একমাত্র বিলাসিতা। শীতের দিনে আগুনের এই উত্তাপটা কী যে আরামের, নীলা তা কাউকে বোঝাতে পারবে না। গ্যাসটা কতক্ষণ জ্বলছে সে দিকে তার কোনও খেয়াল নেই। চায়ের জল বসানোটা আসলে একটা ছুতো। শীতের রাতে আগুনের উষ্ণতাকে সে প্রাণ ভরে উপভোগ করে নিচ্ছে। গ্যাস পুড়ছে পুড়ুক। সেই নিয়ে সে মাথা ঘামায় না। তার স্বামী বিপুলের টাকার অভাব নেই। তারা বিশাল ধনী না হতে পারে কিন্তু এই সব সামান্য বে-হিসেবী খরচ করার মতো তাদের ঢের পয়সা আছে।

এখানে আসবে না কেউ
চেক - হ্যালো টেস্টিং - শুনতে পাচ্ছেন? শুনুন – জানালা দিয়ে হাওয়া ঢুকে গেল। ক্যালেন্ডারটা উড়ছে। দেওয়ালে ঘষটানির একটা শব্দ। পুরোনো বছর উড়ছে। আমি ৩১শে ডিসেম্বরে এসেই থমকে গেছি। বাইরে নতুন বছর চলছে, আমি পুরোনো বছরে। কীরকম অদ্ভুত লাগে। কাকতালীয় ভাবে দেওয়াল ঘড়িটাও বন্ধ। ব্যাটারি শেষ।

অবনী বাড়ি আছো
“আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া ‘অবনী বাড়ি আছ?”